গ্রিস ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত একটি মনোরম সুন্দর দেশ। এই দেশ ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বের কাছে পরিচিত। অনেকের কাছেই গ্রিসের উচ্চ বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আকর্ষণীয়। তবে গ্রিসে বেতন কত এবং গ্রিস যেতে কত টাকা লাগে? এই প্রশ্নগুলো সকলের মাথায় ঘুরপাক খায়। আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলটি পড়লে বিস্তারিত সবকিছু জানতে পারবেন।
গ্রিসের ভূখণ্ড বেশ পাহাড়ি। এই দেশে অনেক দ্বীপ রয়েছে। গ্রিস ইউরোপের একটি দেশ। এটি দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নেটো, ওয়েস্টার্ন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং সেনজেনভুক্ত দেশ।
আরও জানুন: সেনজেন দেশের সুবিধা কি ও তালিকা
ক্রমবর্ধমান পর্যটন শিল্প, সমৃদ্ধ কৃষিক্ষেত্র এবং উন্নত জীবনযাত্রার মান গ্রীসকে কাজের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে আকর্ষণীয় দেশ করে তুলেছে। তবে এই দেশে বেকারত্ব হার একটু বেশি ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায়। তবে বাংলাদেশের চেয়ে এই দেশের বেতন তুলনামূলক অনেক বেশি। তবে এই দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক বেশি হবে।
গ্রিসে বেতন কত
গ্রিসের অর্থনীতি সেবা খাতের উপর বেশি নির্ভরশীল। এখানে পর্যটন শিল্পে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া এই দেশটি জাহাজ শিল্পের জন্যও বিখ্যাত। গ্রিসে বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। গ্রিসে বেতন কত হবে সেটা নির্ভর করবে আপনার কাজের ধরন, যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং কর্মক্ষেত্রের লোকেশন ইত্যাদি বিষয়ের উপর। বড় কোম্পানিতে বেতন বেশি হয়। শহর এলাকায় বেতন বেশি হয়। ভাষা শেখা এবং অভিজ্ঞতা থাকলে গ্রিসে বেতন বেশি হয়।
ক্রমিক নম্বর | কাজ | মাসিক বেতন (টাকায়) |
---|---|---|
১ | কৃষি শ্রমিক | ২-৩ লক্ষ |
২ | কনস্ট্রাকশন শ্রমিক | ১.৫-৩ লক্ষ |
৩ | রেস্টুরেন্ট কর্মী | ২-৩ লক্ষ |
৪ | রং মিস্ত্রি | ২-৩ লক্ষ |
৫ | গার্মেন্টস শ্রমিক | ১.৫-২ লক্ষ |
৬ | ড্রাইভিং | ৩-৪ লক্ষ |
গ্রিসের সর্বনিম্ন বেতন কত
গ্রিসে সর্বনিম্ন বেতন কাঠামো সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই দেশে প্রতি ঘন্টা অনুযায়ী বেতন হিসাব করা হয়। তবে যারা নতুন এবং অবৈধ প্রবাসী তাদের বেতন কম হতে পারে। তবে কেউ সর্বনিম্ন বেতনের চেয়ে কম বেতন পায় না। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গ্রিসের সর্বনিম্ন বেতন ৭৬৫ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় বর্তমানে এক লক্ষ টাকার আশেপাশে। অর্থাৎ এই দেশে গিয়ে কাজ করলে সর্বনিম্ন বেতনের চেয়ে কম বেতন কেউ পাবে না।
গ্রিসে কোন কাজের চাহিদা বেশি
যদিও এই দেশ পর্যটন শিল্পের উপর অধিক নির্ভরশীল। কিন্তু এই দেশে কৃষি কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া রেস্টুরেন্ট কর্মী, কনস্ট্রাকশন কর্মী, গার্মেন্টস কর্মী, রংমিস্ত্রি ইত্যাদি কাজের চাহিদা রয়েছে। তবে বেতন বেশি হয়ে থাকে যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি তাদের। বিশেষ করে যারা ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ার। আপনার যদি ভাষা শেখা এবং অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে এই দেশে কাজ খুঁজে পাওয়া আপনার জন্য সহজ হবে। কিন্তু আপনি যদি অবৈধ প্রবাসী হন তাহলে আপনাকে কম বেতন দেওয়া হবে।
গ্রিস যেতে কত টাকা লাগে
গ্রিস ইউরোপের সেনজেনভুক্ত একটি দেশ। তাই এই দেশের ভিসা পাওয়া অনেক কঠিন। এই দেশের ভিসা প্রসেসিং হতে আনুমানিক ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। সেনজেনভুক্ত দেশ হওয়ায় আপনি নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পাবেন। যা অন্যান্য দেশে গেলে পাবেন না। যার কারণে এই ভিসার চাহিদা অনেক বেশি। এজন্য গ্রিস ভিসার দাম বেশি হয়ে থাকে। গ্রিস যেতে কত টাকা লাগে এই প্রশ্নের উত্তর কেউ সঠিকভাবে দিতে পারবে না।
কারণ ভিসা ক্যাটাগরি এবং ভিসার মেয়াদ অনুযায়ী ভিসার খরচ ভিন্ন হয়। তবে ভিসার খরচ সম্পর্কে ধারণা পাবেন। বর্তমানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে গ্রিসে যেতে আনুমানিক প্রায় ৮ থেকে ১২ লক্ষ টাকা লাগে। সরকারিভাবে যেতে পারলে খরচ কম লাগে। তবে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন এজেন্সির সহযোগিতায় গেলে খরচ কয়েকগুণ বেশি লাগতে পারে। তবে দালাল থেকে সতর্ক থাকবেন।
গ্রিস ভিসা আবেদন করার নিয়ম
গ্রিস সরকার কয়েক ধরনের ভিসা ক্যাটাগরি অফার করে থাকে। প্রথমে উদ্দেশ্য অনুযায়ী আপনার ভিসা ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। তবে এই দেশে বেশিরভাগ মানুষ কাজের উদ্দেশ্যে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যায়। খুব অল্প খরচে অনলাইনে গ্রিস ভিসা আবেদন করতে পারবেন।
নিম্নে উল্লেখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে গ্রিস ভিসা আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন:
- প্রথমে গ্রিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ভিসা আবেদন ফরম ডাউনলোড করে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
- আপনাকে অনলাইনে ভিসা আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে এবং অনলাইনে সেগুলো সাবমিট করতে হবে।
- অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ দিতে হয়।
- আপনি ভিসার জন্য মনোনীত হলেন আপনাকে পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ডেলিভারি করে দেওয়া হবে।
গ্রিসে যেতে কি কি লাগে
গ্রিসে যেতে কি কি লাগবে সেটা নির্ভর করবে আপনার ভিসা ক্যাটাগরির উপর। কারণ উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিসা ক্যাটাগরি ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন: স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, ভিজিট ভিসা ইত্যাদি। গ্রিসে যেতে যেসব যোগ্যতা এবং কাগজপত্র লাগে:
- অফিসিয়াল পাসপোর্ট
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট
- কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
- আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ (ব্যাংক ব্যালেন্স, ট্যাক্স রিটার্ন)
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- কাজের অফার লেটার
- কাজের চুক্তিপত্র
- গ্রিসের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির লেটার
- ভ্রমণ ভিসা
- ট্রাভেল রেকর্ড