আপনি কি দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। দক্ষিণ কোরিয়া একটি উন্নত এবং বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে একটি। দেশটির অর্থনীতি উৎপাদন, প্রযুক্তি এবং সেবার উপর নির্ভরশীল।এই দেশ একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।
দেশটি তার সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঐতিহাসিক স্থান এবং প্রাণবন্ত সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। এজন্য মানুষ দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থাকে। ওয়ার্ক পারমিটের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া সেরা গন্তব্য হতে পারে।
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় জেনে নিতে পারেন। কারণ সরকারিভাবে গেলে খরচ তুলনামূলক কয়েকগুণ কম পড়ে থাকে। এছাড়া এদেশে গেলে আপনি পাবেন উন্নতমানের জীবন ব্যবস্থা, উন্নতমানের শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ এবং উন্নত মানের চিকিৎসা সুবিধা।
স্বপ্নের এই দেশে যেতে হবে তাকে অবশ্যই দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়া আপনাকে জানতে হবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে।
দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত
ভ্রমণের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চাইলে অবশ্যই ভিসা প্রয়োজন পড়বে। তবে ৬০টির বেশি দেশ রয়েছে যেখান থেকে আপনি দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণের জন্য যেতে চাইলে কোন ভিসা লাগবে না। আপনি ভিসা ছাড়া ৯০ দিন অবস্থান করতে পারবেন। তবে বাংলাদেশ থেকে গেলে অবশ্যই ভিসা প্রয়োজন।
দক্ষিণ কোরিয়া কয়েক ধরনের ভিসা ক্যাটাগরি অফার করে থাকে। চার ধরনের ভিসা ক্যাটাগরিতে আপনি এই দেশে যেতে পারবেন।
দক্ষিণ কোরিয়া স্টুডেন্ট ভিসা
স্টুডেন্ট ভিসায় দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য কোন ধরনের লটারির প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে অবশ্যই স্টুডেন্ট ভিসার যোগ্যতা থাকা লাগবে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস থাকলে আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় খুব সহজে এই দেশে পাড়ি জমাতে পারবেন। আপনার আর্থিক সাপোর্ট ডকুমেন্ট লাগবে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি হওয়ার অফার লেটার লাগবে।
স্টুডেন্ট ভিসায় গেলে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘন্টার বেশি সময় কাজ করতে পারবেন না। দক্ষিণ কোরিয়ার পড়াশোনা তুলনামূলক অনেক কঠিন হয়ে থাকে। কোরিয়ান ভাষা দক্ষতার পাশাপাশি ইংরেজি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। নতুবা কোরিয়া গিয়ে আপনার যোগাযোগ করতে অসুবিধা হবে। যত অসুবিধায় থাকুক না কেন, নিঃসন্দেহে দক্ষিণ কোরিয়া উচ্চশিক্ষার জন্য একটি সেরা গন্তব্য হতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসা ইপিএস প্রোগ্রাম নামে পরিচিত। এই ভিসায় সরকারিভাবে যেতে হবে। লটারি ছাড়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যায় না। বাংলাদেশ থেকে মাধ্যমে বোয়েসেলের মাধ্যমে কয়েক ধাপ সম্পন্ন করে আপনি কাজের উদ্দেশ্য এই দেশে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই কাজের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, ভাষা দক্ষতা থাকা লাগবে।
আপনি যদি সৌভাগ্যক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসা পেয়ে যান, তাহলে আপনি ভালো একটা বেতনে সেখানে চাকরি করতে পারবেন। উন্নত এই দেশে একটি ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে কোন দিক দিয়েই এই দেশ পিছিয়ে নেই। দৈনিক অধিক পরিমাণ সময় পরিশ্রম করলে আপনি কয়েক লক্ষ টাকা প্রতি মাসে ইনকাম করতে পারবেন।
দক্ষিণ কোরিয়া বিজনেস ভিসা
আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার আপনার আপনার জন্য সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। এই দেশে যদি আপনি ৫ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করতে করেন, তাহলে আপনি লটারি ছাড়াই পেয়ে যাবেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজনেস ভিসা। বিজনেস ভিসা দুই প্রকারের রয়েছে। একটি হলো ৯০ দিনের কম সময়ের জন্য এবং আরেকটি হলো ৯০ দিনের বেশি সময়ের জন্য। এ ভিসায় যেতে হলে অবশ্যই কিছু ডকুমেন্টস লাগবে।
দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা
৯০ দিনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা নিয়ে আপনি এই দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। কিছু দেশের নাগরিকদের টুরিস্ট ভিসা প্রয়োজন হয় না। তবে বাংলাদেশ থেকে গেলে অবশ্যই টুরিস্ট ভিসা বাধ্যতামূলক। এ ভিসায় যেতে হলে লটারির প্রয়োজন পড়ে না। আপনি দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র, ঐতিহাসিক স্থান কিংবা পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন। অনেকে টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে সেখানে কাজ করছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা করতে কি কি লাগে
দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে সেটা নির্ভর করবে ভিসা ক্যাটাগরির উপর। কারণ ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী কাগজপত্রের ভিন্নতা রয়েছে। তবে কিছু আবশ্যিক কাগজপত্র রয়েছে যেগুলো যেকোনো ধরনের ভিসা করতে লাগে।
দক্ষিণ কোরিয়া ভিসার আবশ্যিক কাগজপত্র:
- একটি বৈধ পাসপোর্ট
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
- মেডিক্যাল সার্টিফিকেট
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- ভিসা আবেদন ফরম
- ভিসা আবেদন ফি
- ভিসা প্রসেসিং ফি
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে:
- বয়সসীমা ১৮ – ৩৯ বছর হতে হবে
- কালার টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে
- এসএসসি পাস সার্টিফিকেট
- স্কিল সার্টিফিকেট
- কাজের অভিজ্ঞতা প্রমাণপত্র
- কোরিয়ান ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট
স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে:
- শিক্ষাগত যোগ্যতা সার্টিফিকেট
- আর্থিক সাপোর্ট ডকুমেন্ট (ব্যাংক স্টেটমেন্ট)
- কোরিয়ার কোনো প্রতিষ্ঠানের ভর্তির অফার লেটার
- কোরিয়ান ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট
বিজনেস ভিসার ক্ষেত্রে:
- আমন্ত্রণপত্র: কোরিয়ান কোম্পানির কাছ থেকে (যদি থাকে)
- বিমান টিকিট: রিটার্ন টিকিট (যদি থাকে)
- কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন সনদ (অনুবাদ এবং প্রত্যয়িত)
- আর্থিক সাপোর্টের প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স রিটার্ন)
টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে:
- স্থায়ী চাকরিজীবী হলে নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে ছুটির অনুমতিপত্র
- আর্থিক সাপোর্টের প্রমাণ
দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম
দক্ষিণ কোরিয়া ভিসার জন্য দুইভাবে আবেদন করা যায়। অনলাইন মাধ্যমে এবং অফলাইন মাধ্যমে। আপনি ঘরে বসে অনলাইন মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য অবশ্যই আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। তারপর দক্ষিণ কোরিয়ার ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য প্রথমে আপনাকে ভিসা ক্যাটারিং নির্বাচন করতে হবে। তারপর সঠিকভাবে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করা কপি জমা দিতে হবে। এরপর ভিসা আবেদন এবং প্রসেসিং ফি জমা দিতে হবে। আর আপনি যদি অফলাইনে দক্ষিন কোরিয়া ভিসা আবেদন করতে চান তাহলে আপনাকে সরাসরি বাংলাদেশের দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন হয়ে যায়।