গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের জন্য আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের মহৎ লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ঋণ প্রদানের বাইরেও, গ্রামীণ ব্যাংক আজ একটি সামাজিক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে যা বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য হ্রাসে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।
ইন্টারনেটে সার্চ করে অনেকে গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা জানতে চায়। এছাড়া ব্যাংক লোন নিতে আগ্রহী অনেকে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার কত জানতে ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে থাকে। তাদের উদ্দেশ্যেই মূলত এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। তাই ধৈর্য ধরে একদম শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা
গ্রামীণ ব্যাংক গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। নিম্নে গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধাগুলো উল্লেখ করা হলো:
- সহজলভ্য ঋণ: গ্রামীণ ব্যাংক গরিব ও অসচ্ছল মানুষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে নারীদের ঋণ প্রদানে এই ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কম সুদের হার: অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় গ্রামীণ ব্যাংকে ঋণের সুদের হার অনেক কম। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার কত জানলেই বুঝতে পারবেন।
- ন্যূনতম জামানত: গ্রামীণ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ন্যূনতম জামানতের প্রয়োজন হয় না। হলেও সেটা নগন্য।
- বিভিন্ন ধরণের ঋণ: কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা, শিক্ষা, গৃহনির্মাণ, চিকিৎসা সহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করে থাকে।
- সঞ্চয়ের সুযোগ: গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় স্কিম পরিচালনা করে থাকে যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- বিমা সেবা: গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের বিমা সেবা প্রদান করে থাকে। যেমন: জীবন বিমা, স্বাস্থ্য বিমা, ফসল বিমা, পশু বিমা ইত্যাদি।
- প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ: গ্রামীণ ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়া ব্যাংক নিজেই বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে।
গ্রামীণ ব্যাংকের মূলনীতি সমূহ
গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের মূলে রয়েছে ৪টি মূলনীতি যা এটিকে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা করে তুলেছে। তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা তো আছেই। যথা:
- গ্রাহকদের উপর বিশ্বাস: গ্রামীণ ব্যাংক বিশ্বাস করে যে গরিবরা ঋণ পরিশোধের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং তাদের ঋণের সুযোগ দেওয়া হলে তারা তাদের জীবন উন্নত করতে পারে।
- সামাজিক দায়িত্ব: লাভের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয় গ্রামীণ ব্যাংক সামাজিক দায়িত্ব পালনে।
- নারীর ক্ষমতায়ন: নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে গ্রামীণ ব্যাংক, ঋণের বেশিরভাগই প্রদান করে নারীদের।
- স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: ঋণগ্রহীতাদের ঋণের শর্তাবলী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয় এবং তাদের ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখা হয়। তাছাড়া আরও অনেক গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার কত
ঋণের পরিমাণ, মেয়াদ, এবং ধরনের উপর ভিত্তি করে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার কত হবে সেটা পরিবর্তিত হতে পারে। গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরণের ঋণ প্রদান করে থাকে। প্রতিটি ঋণের নিজস্ব সুদের হার থাকে।
কত সুদ দিতে হবে?
ক্ষুদ্রঋণ:
- নিয়মিত ঋণগ্রহীতা: ১০% (ফ্ল্যাট হার)
- অনিয়মিত ঋণগ্রহীতা: ২০%
উচ্চশিক্ষা ঋণ:
- পড়াশোনার সময়: সুদমুক্ত
- পড়াশোনা শেষে: ১০%
জীবিকা ঋণ:
- কৃষি ঋণ: ৮%
- অন্যান্য: ১০%
উপসংহার
গ্রামীণ ব্যাংক কেবল ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নয়। বরং এটি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করে থাকে। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার কত তা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।