নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম না জেনে আবেদন করতে গেলে আপনাকে বিভিন্ন রকম সমস্যায় পড়া লাগতে পারে। আর এজন্য আপনাকে আবেদন করার নিয়ম জানতে হবে সাথে কি কি কাগজ লাগে এবং কত টাকা ফি লাগে ইত্যাদি জানতে হবে।
সম্পূর্ণ গাইডলাইন আপনাদের শেয়ার করা হবে। এজন্য আপনাকে শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
জন্ম নিবন্ধনের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। সন্তানের স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে বিদেশ যাত্রা পর্যন্ত সব জায়গায় এই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টটি প্রয়োজন পড়ে।
এছাড়া ভোটার হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা একজন নাগরিকের পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ছাড়া বর্তমানে কোন কাজ করা যায় না। তাই আপনার পুরাতন জন্ম সনদ অবশ্যই অনলাইন করে নিবেন।
জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজ লাগে?
যাদের বয়স শূন্য থেকে ছয়চল্লিশ দিন (ক ক্যাটাগরি) তাদের কোন ধরনের জন্ম নিবন্ধন ফি লাগে না। তাদের শুধুমাত্র কিছু কাগজপত্র লাগবে। টিকা কার্ড কিংবা মেডিকেল সনদপত্র, চালান কপি (পেমেন্টের রশিদ), পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর, খাজনা ও কর পরিষদের রশিদ, একটি সচল মোবাইল নাম্বার এবং পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর।
আর যাদের বয়স ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর তাদের অতিরিক্ত একটি কাগজ লাগতে পারে। যদি শিশুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরে তাহলে প্রত্যয়ন পত্র লাগবে। সাথে নিবন্ধন ফি হিসেবে ২৫ টাকা লাগবে। বিদেশ থেকে আবেদন করলে এক ডলার লাগবে।
যাদের ৫ বছরের বেশি তাদের অতিরিক্ত হিসেবে শিক্ষা সনদ এবং বয়স প্রমাণের কাগজপত্র লাগবে। এদের নিবন্ধন ফি ৫০ টাকা। আর বিদেশ থেকে আবেদন করলে এক ডলার লাগবে। ‘ক’ ক্যাটাগরির কাগজপত্র সকলের জন্য লাগবে।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন যেভাবে
আপনি ঘরে বসে মোবাইল দিয়ে একটা ওয়েবসাইট ভিজিট করার মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে ভিজিট করতে হবে bdris.gov.bd/br/application এই লিংকে।
তারপর আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য পিতা-মাতার নাম জন্ম তারিখ এবং ঠিকানা দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। আপনি কিভাবে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করবেন সেটা আমি আপনাকে ধাপে ধাপে দেখাবো।
##নিবন্ধন ওয়েবসাইট ভিজিট##
আপনি যদি মোবাইল দিয়ে আবেদন করেন তাহলে অবশ্যই ক্রোম ব্রাউজারে গিয়ে পিসি মোড চালু করে নিবেন। তাহলে ল্যাপটপের মত কাজ করতে পারবেন।
তারপরে আবেদন করার লিংকটিতে প্রবেশ করতে হবে। লিংকটি হলো: bdris.gov.bd/br/application লিংকে প্রবেশ করার পর নিচের মত একটা ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। আপনি তিনটি অপশন দেখতে পাবেন। জন্মস্থান, স্থায়ী ঠিকানা এবং বাংলাদেশ দূতাবাস।
যে অপশন সিলেক্ট করবেন সেখান থেকে পরবর্তীতে জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করতে হবে। শিশুর পিতার স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করবেন। আর প্রবাসী হলে অবশ্যই শেষের অপশন সিলেক্ট করবেন।
তবে বেশিরভাগ মানুষ জন্মস্থান সিলেক্ট করে থাকে। কারণ এটা নানা বাড়ি কিংবা দাদা বাড়ি হতে পারে। তারপর পরবর্তী পেজে ক্লিক দিয়ে যেতে হবে।
##আবেদনকারীর তথ্য প্রদান##
এই পেজে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত পরিচিতি দিতে হবে। এই পেজ পূরণ করতে ব্যক্তির নাম ইংরেজি ও বাংলা, জন্ম তারিখ, জন্মস্থানের ঠিকানা বাংলায ও ইংরেজি প্রয়োজন পড়বে। অবশ্যই একজন শিক্ষিত মানুষের সহযোগিতা নিবেন।
প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে এসব কাজ করবেন। নতুবা কোন ধরনের ভুল হলে পরবর্তীতে ঝামেলায় পড়তে হবে। জন্ম তারিখ সিলেক্ট করবেন এই ফরমেটে (dd-mm-yyyy অর্থাৎ দিন-মাস-বছর)।
এ সময় একটি আপনার সাথে নতুন পপ আপ উইন্ডো আসবে। কোন কোন কাগজপত্র লাগবে সে সম্পর্কে। আপনি তখন “আমার কাছে এই ডকুমেন্ট গুলি আছে” এই লেখাই ক্লিক করবেন। এরপর আপনাকে লিঙ্গ এবং জন্মস্থানের ঠিকানা দিতে হবে।
পাড়া-মহল্লা কিংবা বাসা নম্বর না থাকলে দিতে হবে না। সেখানে হাইপেন (-) চিহ্ন বসাবেন। এরপরে নিচের পরবর্তী অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী পেজে যাবেন। ইংরেজি লেখার সময় অবশ্যই বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করতে হবে।
##পিতা-মাতার তথ্য প্রদান##
এই পেজে আপনাকে পিতা-মাতার তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। তবে এখানে একটা বিষয় রয়েছে। যাদের জন্ম ০১/০১/২০০১ তারিখের আগে হয়েছে তাদের পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধনের নম্বর লাগবে না।
যাদের এই তারিখের পরে হয়েছে তাদের অবশ্যই পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের নম্বর প্রয়োজন পড়বে। জাতীয়তা এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিয়ে এই অংশ পূরণ করবেন।
পিতা মাতার নাম অবশ্যই সঠিকভাবে বসাবেন। আমি যার আবেদন তথ্য পূরণ করছি তার জন্ম তারিখ ০১/০১/২০০১ সালের পরে। এরপর পরবর্তী অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী পেজে যেতে হবে।
##আবেদনকারীর জন্মস্থানের ঠিকানা##
এই পেজে আবেদনকারীর জন্মস্থানের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দিতে হবে। যদি বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা একই হয় তাহলে বর্গের মতো চিহ্নে টিক দিতে হবে।
দুই জায়গায় আপনাকে টিক তুলতে হবে। ছবিতে ভালোভাবে খেয়াল করুন আমরা দাগ দিয়ে দিয়েছি। এরপর আপনাকে সকল তথ্য পূরণ করতে হবে ইংরেজিতে এবং বাংলায়। বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা পূরণ করার শেষ হলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক দিতে হবে।
##আবেদনকারীর প্রত্যয়ন তথ্য##
এই পেজে আবেদনকারীর পক্ষে প্রত্যয়ন করতে হবে। জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি হয় তাহলে সে নিজে নিজে করতে পারবে। তখন তাকে “নিজ” অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
আর যদি ১৮ বছরের নিচে হয় তাহলে তার পক্ষে অভিভাবক এই কাজটি করতে পারবে। তখন ‘পিতা’ অপশন সিলেক্ট করে দিবেন। এরপর আপনাকে আবেদনকারীর নাম প্রদান করতে হবে।
এরপর আপনাকে কিছু ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে। এজন্য আপনাকে সংযোজন অপশনে ক্লিক করে আপনার ফাইলটি সিলেক্ট করতে হবে। ফাইলটি আপলোড করার পর ফাইল টাইপ দেখতে পাবেন।
সেখানে সিলেক্ট করে দিবেন এটা কোন ধরনের ফাইল। তারপর স্টার্ট বাটনে ক্লিক করতে হবে। এভাবে প্রয়োজনীয় সবগুলো ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে।
সবকিছু ঠিকমতে আপলোড হলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করতে হবে।
##আবেদন রিভিউ##
এ পর্যায়ে আপনাকে আবেদন পত্রটি সম্পূর্ণ রিভিউ করতে হবে। কোন ধরনের ভুল থাকলে সেটা সংশোধন করার সুযোগ এখনই। কারণ পরবর্তীতে কোন ধরনের সংশোধন করার সুযোগ নেই।
রিভিউ করা শেষ হলে নিচের দিকে দেখবেন মোবাইল নম্বর প্রদানের অপশন রয়েছে। সেখানে একটি সচল মোবাইল নম্বর প্রদান করবেন। পাশে দেখবেন ওটিপি পাঠান নামক অপশন রয়েছে সেখানে ক্লিক করলে একটি ওটিপি কোড আপনার নম্বরে চলে আসবে।
এই ওটিপি কোড আপনাকে পাশের ফাঁকা বক্সে বসাতে হবে। এরপর আপনাকে সাবমিট বাটনে ক্লিক দিতে হবে। তাহলে আপনার আবেদনটি সাকসেসফুল হয়ে যাবে।
এবার আপনাকে আবেদন পত্রটি ডাউনলোড করে নিতে হবে প্রিন্ট অপশনে ক্লিক করে।
##পেমেন্ট করুন##
আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করার পর নিচে দেখতে পাবেন পেমেন্ট করার অপশন রয়েছে। ‘ফী প্রদান করুন’ অপশনে ক্লিক করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
পেমেন্ট সাকসেসফুলি সম্পন্ন হলে চালান কপি ডাউনলোড করার লিংক পাবেন। চালান কপি ডাউনলোড করার লিংকে ক্লিক করে চালানটি ডাউনলোড করে নিন।
এরপর আপনাকে আবেদন প্রিন্ট কপি, চালান কপি এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখান থেকে আপনি ১৫ দিনের মধ্যে কাঙ্খিত সন্দরটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
আশা করি, নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন ফরম পূরণ করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আপনি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
যেকোনো ধরনের জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আমি সব সময় আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত।