বাংলাদেশের নাগরিকদের উপযুক্ত বয়স হলে উপজেলা ভোটার অফিসে গিয়ে কিংবা অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে ১৬ বছর বয়স লাগে ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য। অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম জেনে ঘরে বসে আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এজন্য আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে।
প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। একটি দেশে বসবাস করার জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনে এই স্মার্ট কার্ডটি অপরিহার্য। যদিও একটা সময় পর্যন্ত অনলাইন জন্ম নিবন্ধন দিয়ে রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজ করা যায়। তবে একটা বয়স পার হবার পর জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ধৈর্য ধরে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন তাহলে অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানতে পারবেন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
পাসপোর্ট তৈরি, চাকরির আবেদন, জমি জমা রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, ভোটার হিসেবে নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট, মোবাইল ফোন সিম কেনা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির সংযোগ, জাতীয় সঞ্চয়পত্র ক্রয়, হোটেল রুম বুকিং ইত্যাদি প্রতিটি কাজে জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন হয়।গুরুত্বপূর্ণ এই ডকুমেন্ট পাওয়ার জন্য আপনাকে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।
নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন আপনি তিনভাবে করতে পারবেন। যথা:
- অনলাইনে আবেদন
- উপজেলা নির্বাচন অফিসে সরাসরি আবেদন
- এলাকায় হালনাগাদের মাধ্যমে আবেদন
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনাকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে। তবে আগে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে। ভোটার আইডি কার্ড করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করার পর অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করবেন। বুঝার সুবিধার্থে নিম্নে উল্লেখিত ধামগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করুন:
- প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় পরিচয়পত্রের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট NIDW ভিজিট করতে হবে। আপনি সরাসরি এই লিংকে ক্লিক দিলে উক্ত পেজে আপনাকে নিয়ে যাবে। তারপর আপনাকে “আবেদন করুন” অপশনে ক্লিক দিতে হবে।
- একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এজন্য আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে “বহাল” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার পর আপনাকে একটি ব্যক্তিগত সচল মোবাইল নাম্বার বসাতে হবে। তারপর সেটি ভেরিফাই করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার মোবাইলে একটি কোড পাঠানো হবে। সেটি বসিয়ে আপনাকে “বহাল” অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশন করার পর ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। নিজের মনের মত একটি ইউনিক ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড সেট করে নিবেন। তারপর আপনাকে পুনরায় “বহাল” অপশনে ক্লিক করতে হবে। তাহলে আপনার অনলাইনে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়ে যাবে। এরপর আপনাকে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে পুনরায় উপরের লিংকটিতে গিয়ে লগইন করতে হবে।
- আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করার পর আপনাকে প্রোফাইল এডিট করে নিবেন।
- আপনাকে ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য, পেশা এবং ঠিকানা ইত্যাদি ইনফরমেশন দিয়ে সঠিকভাবে প্রোফাইলটি এডিট করতে হবে।
- ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের প্রোফাইল এডিট করে সকল তথ্য দেয়ার পর আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে। এরপর আপনাকে আইডি কার্ডের “ফাইনাল আবেদন সাবমিট” করতে হবে। অবশ্যই অনলাইনে আবেদনের কপি সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
- অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করার পর আপনাকে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হবে। এই নিয়মে অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে ভোটার হওয়ার নিয়ম
বেশিরভাগ মানুষ অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করার ঝামেলা এড়াতে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করে থাকে। এক্ষেত্রেও আপনাকে জানতে হবে নতুন ভোটার আইডি করতে কি কি লাগে। নির্বাচন কমিশন অফিসে যাওয়ার পর আপনাকে “ভোটার নিবন্ধন ফরম ২” সংগ্রহ করে সঠিকভাবে পূরণ করে অন্যান্য কাগজপত্র সংযুক্ত করে আবেদনপত্রটি জমা দিতে হবে।
ভোটার হালনাগাদের মাধ্যমে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একটা নির্দিষ্ট সময়ে পরপর ভোটার হালনাগাদ করে থাকে। এ সময় আপনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রতিটি মহল্লায় ঘুরে ঘুরে উপযুক্ত বয়সীদের হালনাগাদ করে নথিভুক্ত করে থাকে। নথিভুক্ত করার পর নির্দিষ্ট একটি তারিখে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে কর্মকর্তারা এসে বায়োমেট্রিক ডাটা নিয়ে থাকে।
দীর্ঘদিন প্রসেসিং হওয়ার পর ইউনিয়ন কিংবা পৌরসভা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়। কারো যদি জরুরী প্রয়োজন হয় তাহলে অনলাইনে থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে আইডি তৈরি করার জন্য আপনাকে জানতে হবে নতুন ভোটার আইডি করতে কি কি লাগে।
নির্বাচন কমিশন আপনার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে বায়োমেট্রিক ডেটা নেওয়ার জন্য ডাকবেন। তখন আপনাকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে চোখের আইরিশ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং নিজের ছবি দিতে হবে। এরপর কিছুদিন প্রসেসিং করতে সময় নিবে। তারপর আপনি অনলাইনে থেকে ভোটার স্লিপ নম্বর কিংবা মোবাইল নম্বর দিয়ে অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে
নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনাকে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আপনি যদি বাংলাদেশী নাগরিক হন, আপনার বয়স যদি কমপক্ষে ১৬ বছর হয় এবং আপনি যদি পূর্বে জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করে না থাকেন তাহলে আপনি নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে নিম্নে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করতে হবে:
- ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট কপি
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- নাগরিকত্ব সনদ
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট (পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি)
- ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ না থাকে)
- ব্লাড টেস্ট গ্রুপ সার্টিফিকেট
- সচল মোবাইল ফোন নম্বর
- আবেদনকারীর বয়স বেশি হলে অঙ্গীকারনামা লাগবে
- পেশাযুক্ত করতে অবশ্যই এমপ্লয়ার আইডি কার্ড লাগবে
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশের নাগরিকদের নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য কোন ধরনের ফি প্রদান করতে হয় না। তবে আপনি যদি অন্য কারো সাহায্যে স্মার্ট কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বকশিশ হিসেবে দেওয়া লাগতে পারে। তবে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে অবশ্যই আপনাকে সংশোধন ফি পরিশোধ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ধরনের উপর নির্ভর করে সংশোধন ফি আলাদা হয়ে থাকে।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন লাগে
নতুন ভোটার আইডি কার্ড হাতে পেতে কত সময় লাগবে সেটা নির্ভর করে থাকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর। আপনার যদি ১৮ বছর হয় তাহলে আপনি বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়ার ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে আইডি কার্ড পাবেন। যারা ১৬ বছর বয়সে ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করবেন তাদের আইডি কার্ডটি হাতে পেতে সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স হতে হবে। তাহলে অনলাইন থেকে ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। কিন্তু স্মার্ট কার্ড হাতে পেতে তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। কারো যদি জরুরী প্রয়োজন হয় তাহলে উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে স্মার্ট আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।