রোমানিয়া দরিদ্র দেশ হওয়ায় এই দেশে কাজের বেতন তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। যার কারণে মানুষ রোমানিয়া থেকে ফ্রান্স যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। আপনি যদি রোমানিয়া থেকে ফ্রান্স কিভাবে যাওয়া যায় জানতে চান তবে এই আর্টিকেল থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
বাংলাদেশ থেকে রোমানিয়াতে বৈধভাবে যাওয়া অনেক সহজ। তবে এই দেশে গেলে কাজের বেতন অনেক কম পাওয়া যায়। যার কারণে সেখান থেকে মানুষ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেটা হতে পারে বৈধভাবে কিংবা অবৈধভাবে। অবৈধভাবে এই দেশ থেকে ফ্রান্সে গেলে আপনাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হবে।
সাধারণত রোমানিয়া থেকে মানুষ পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে ফ্রান্সে যায়। ট্রাকের ভিতরে পণ্যের সাথে কন্টেইনারে মানুষকে ঢুকিয়ে অন্য দেশে পাঠানো হয়ে থাকে। অবৈধভাবে গেলে চাইলেই আপনি দেশে ফিরতে পারবেন না। যতদিন পর্যন্ত আপনার কাগজ না হবে। আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করতে হবে।
বেশিরভাগ মানুষ অবৈধভাবে ফ্রান্সে গিয়ে এখন আফসোস করছে। তবে এই আর্টিকেলে আমরা জানবো, বৈধ প্রক্রিয়াতে রোমানিয়া থেকে ফ্রান্স কিভাবে যাওয়া যায়। কারণ অবৈধ উপায়ে রোমানিয়া থেকে ফ্রান্স যাওয়াকে আমরা নিরুৎসাহিত করে থাকি। এতে জীবন ঝুঁকি রয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
রোমানিয়া থেকে ফ্রান্স কিভাবে যাওয়া যায়
ফ্রান্স ইউরোপের উন্নত একটি দেশ। ক্ষমতা এবং অর্থনীতি বিবেচনায় এই দেশ বিশ্বের একটি শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। এই দেশে বৈধভাবে যেতে পারলে পাবেন উচ্চমানের লাইফস্টাইল, তুলনামূলক বেশি আয়ের সুযোগ এবং উচ্চ সামাজিক নিরাপত্তা। শুধু উচ্চ শিক্ষার অর্জনের জন্যও ফ্রান্স একটি সেরা গন্তব্য হতে পারে।
এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেনজেনভুক্ত একটি দেশ। এই দেশে যেতে পারলে বৈধভাবে আপনি ইউরোপের সেনজেনভুক্ত ২৭টি দেশে ভ্রমণ এবং বাণিজ্যের সুযোগ পাবেন। রোমানিয়া আংশিক সেনজেনভুক্ত দেশ। তাই এই দেশ থেকে সেনজেনভুক্ত অন্যান্য দেশে যাওয়ার জন্য কিছু সীমাবদ্ধ রয়েছে। শুধু রোমানিয়ান নাগরিকরা ভিসা ছাড়া সেনজেনভুক্ত দেশে বিমান এবং জাহাজে করে যাওয়ার সুযোগ পাবে।
এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের সেনজেন ভিসা লাগবে। তবে তারা সেখানে অবাধে ভ্রমণ এবং বাণিজ্যের সুবিধা পাবে না। প্রবাসীরা চাইলে রোমানিয়ায় পাঁচ বছর ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করে এই দেশের নাগরিকত্ব নিতে পারেন। তারপর আপনি চাইলে সেনজেন ভিসা নিয়ে এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
তবে যারা রোমানিয়ার নাগরিক নন, প্রবাসী তাদের অবশ্যই ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য ভিসার প্রয়োজন হবে। ফ্রান্স বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের ভিসা অফার করে থাকে। এই দেশ মেয়াদের ভিত্তিতে সাধারণত দুই ধরনের ভিসা প্রোগ্রাম অফার করে থাকে।
- শর্ট-স্টে ভিসা (সেনজেন ভিসা): আপনি ৯০ দিনের কম সময়ের জন্য ফ্রান্সে ভ্রমণ করার অনুমতি পাবেন। এই ক্যাটাগরির ভিসা পেলে আপনি ভ্রমণ, ব্যবসা, পরিবার বা বন্ধুদের সাথে দেখা করার সুযোগ পাবেন। যেমন: ব্যবসায়িক ভিসা, আর্টিস্ট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা, মেডিকেল ভিসা, ট্রানজিট ভিসা ইত্যাদি।
- লং-স্টে ভিসা: আপনি ৯০ দিনের বেশি সময়ের জন্য ফ্রান্সে থাকার অনুমতি পাবেন। এই ক্যাটাগরির ভিসা পেলে আপনি পড়াশোনা, কাজ, ব্যবসা এবং পরিবারের সাথে যোগদানের সুযোগ পাবেন। যেমন: স্টাডি ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, বিজনেস ভিসা, ফ্যামিলি ভিসা ইত্যাদি।
রোমানিয়া থেকে ফ্রান্স যেতে হলে প্রথমে আপনাকে উদ্দেশ্য অনুযায়ী ফ্রান্সের ভিসা ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হয়। ভিসা ক্যাটাগরি নির্বাচন করার পর আপনাকে সেই ভিসার রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
তারপর আপনাকে ফ্রান্স ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য আপনাকে ফ্রান্সের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে অনলাইনে আবেদন করার জন্য। তারপর উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিসা ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। এরপর আপনাকে অনলাইনে সঠিকভাবে ফ্রান্স ভিসা আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
তারপর আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড দিতে হবে। সাথে অবশ্যই আপনাকে ভিসা আবেদন ফি পেমেন্ট করতে হবে। সর্বশেষ আপনাকে ফ্রান্সের দূতাবাসে সাক্ষাৎকার দিতে হবে। এই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে আপনার আবেদনটি তারা পর্যালোচনা করবে। পরবর্তীতে জানিয়ে দেবে অনুমোদন পেলেন নাকি রিজেক্ট হলেন।
রোমানিয়া থেকে ফ্রান্স যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে
আপনি যদি রোমানিয়ার নাগরিক হন, তাহলে ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য তেমন কোন ধরনের কাগজপত্র লাগবে না। শুধু আপনাকে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। তাহলেই আপনি ভ্রমণ খরচ দিয়ে বিমান বা জাহাজের মাধ্যমে ফ্রান্সে যেতে পারবেন। কিন্তু যারা ফ্রান্সের নাগরিক নয় অর্থাৎ প্রবাসী তাদের অবশ্যই ভিসা করার জন্য কাগজপত্র লাগবে। নিচের টেবিলে উল্লেখ করা হলো কি কি কাগজপত্র লাগবে:
ক্রমিক নম্বর | কাগজপত্র |
---|---|
১ | এক বছর মেয়াদী ডিজিটাল পাসপোর্ট |
২ | ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি |
৩ | ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) |
৪ | আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট |
৫ | আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধনের কপি |
৬ | আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি |
৭ | চেয়ারম্যান কর্তৃক সনদপত্র |
৮ | ফ্রান্স ভিসা আবেদন ফি |
৯ | ফ্রান্স ভিসা আবেদন ফরম |
১০ | স্কিল সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) |
১১ | কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ |
রোমানিয়া থেকে ফ্রান্স যেতে কত টাকা লাগে
রোমানিয়ার নাগরিকদের ফ্রান্সে যেতে শুধু ভ্রমণ খরচ দিতে হয়। কিন্তু যারা রোমানিয়ার নাগরিক নয় তাদের অবশ্যই একটি বৈধ ভিসা লাগবে। অবৈধ উপায়ে রোমানিয়া থেকে ফ্রান্স যেতে চাইলে আপনাকে আনুমানিক প্রায় চার লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে।
তবে আপনি নিজে নিজে চেষ্টা করে যদি বৈধভাবে ভিসা করে যেতে চান তাহলে খরচ আরো অনেক কম পড়বে। বৈধ উপায়ে যেতে আনুমানিক খরচ পড়বে প্রায় দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা। কখনো কখনো খরচ অনেক কম পড়ে থাকে যদি আপনি সরকারিভাবে যেতে পারেন।