অস্ট্রেলিয়া উন্নত জীবনযাত্রার মান, উচ্চ বেতন, নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে অনেকের কাছেই স্বপ্নের দেশ। এটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কাজের গন্তব্য। এখানে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা অনেক বেশি।
এই আর্টিকেলে আমরা অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো যা আপনাকে আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তবে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা পাওয়া অতটা সহজ নয়। কিন্তু অসম্ভবও নয়।
অস্ট্রেলিয়া পরিবার নিয়ে বসবাসের একটি উপযুক্ত দেশ। কারণ এখানে পাবেন অধিক আয়ের সুযোগ, সামাজিক নিরাপত্তা, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ান সরকার দক্ষ শ্রমিকদের অভিবাসনকে উৎসাহিত করে থাকে। এসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হলে আপনার অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা প্রয়োজন হবে।
অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা আবেদন করার নিয়ম
অস্ট্রেলিয়া সরকার কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা অফার করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিসা ক্যাটাগরি হলো স্কিলড ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভিসা (subclass 189)। এছাড়া আরও কিছু কাজের অস্ট্রেলিয়া ভিসা ক্যাটাগরি রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনার নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা এবং কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা লাগবে। আপনার বয়স ১৮ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে হলে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা পেতে যেসব যোগ্যতা এবং কাগজপত্র লাগে:
ক্রমিক নম্বর | ডকুমেন্টস | শর্ত |
---|---|---|
১ | ই-পাসপোর্ট | মেয়াদ উত্তীর্ণের অন্তত ২৪ মাস বাকি থাকতে হবে |
২ | পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট | সর্বশেষ ৩ মাসের |
৩ | মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট | অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অনুমোদিত ডাক্তার কর্তৃক তৈরি |
৪ | সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি | সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড |
৫ | ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (আইএলটিএস) | ন্যূনতম স্কোর ৫.৫ |
৬ | শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট | সত্যায়িত অনুবাদ (ইংরেজিতে) |
৭ | জাতীয় পরিচয় পত্র | সত্যায়িত অনুবাদ (ইংরেজিতে) |
৮ | কোম্পানির অফার লেটার | মূল কপি |
৯ | চাকরির সিভি | আপডেটেড এবং ইংরেজিতে |
১০ | আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স রিটার্ন) | সর্বশেষ ৬ মাসের |
১১ | স্কিল সার্টিফিকেট | যদি প্রযোজ্য হয় |
১২ | কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ | সত্যায়িত অনুবাদ (ইংরেজিতে) |
বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরের টেবিলটি শুধুমাত্র একটি নির্দেশিকা। ভিসার ধরন এবং ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে আরও কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হতে পারে।
আপনি নিম্নে উল্লেখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন:
- প্রথমে আপনাকে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অফিসিয়াল ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে ভিজিট করে একটি একাউন্ট তৈরি করতে হবে।
- একাউন্ট তৈরি করা হয়ে গেলে আপনাকে অনলাইনে ভিসা ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে আবেদন করতে হবে। আগে থেকে আপনাকে অস্ট্রেলিয়া ভিসা আবেদন ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করে রাখতে হবে।
- এরপর আপনাকে অনলাইনে সঠিকভাবে ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ভিসা আবেদন ফি জমা দিতে হবে।
- অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা প্রসেসিং হতে ৬ থেকে ৮ মাস সময় লাগতে পারে। এই সময় আপনি অপেক্ষা করবেন। ভিসা পেলে আপনাকে ডেলিভারি দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়া সর্বনিম্ন বেতন কত
অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা খরচ কত
অস্ট্রেলিয়া বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজের ভিসা রয়েছে। এসব ভিসা ক্যাটাগরি এবং ভিসার মেয়াদের উপর নির্ভর করে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা খরচ কম বেশি হয়ে থাকে। সরকারিভাবে কাজের ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যেতে পারলে খরচ অনেক কম লাগে। কিন্তু বেসরকারিভাবে বিভিন্ন এজেন্সির সাহায্যে গেলে তুলনামূলক খরচ কয়েকগুণ বেশি লাগে।
এছাড়া যারা দালালের মাধ্যমে যায় তাদের আরও বেশি টাকা লাগে এবং জীবনের ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা নিয়ে যেতে আনুমানিক প্রায় ১০ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা লাগে। তবে এটা শুধু ধারণা মাত্র। বাস্তবে খরচ কম কিংবা বেশি হতে পারে। কারণ বিভিন্ন এজেন্সি এবং দালাল ভিসার জন্য যার কাছ থেকে যত টাকা নিতে পারে। তাই এই ভিসা খরচের পরিমাণ সঠিকভাবে বলা সম্ভব না।
অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা বেতন কত
অস্ট্রেলিয়া দক্ষ শ্রমিকদের কাছে কাজের জন্য সেরা একটি জায়গা। এখানে কাজের জন্য শ্রমিকদের বেশি বেতন দেওয়া হয়। এই দেশে বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে যার। ফলে দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। এই দেশে শ্রমিকরা গিয়ে সাধারণত কৃষিকাজ, কনস্ট্রাকশন কাজ, বাগান শ্রমিক, ডেলিভারি ম্যান, পাইপ ফিটিং, ইলেকট্রিশিয়ান, ড্রাইভিং ইত্যাদি কাজ করে থাকে।
অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এই দেশে প্রতিবছর শ্রমিকের সংকট হয়ে থাকে। শ্রমিক সংকট কাটানোর জন্য প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চ বেতনে দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়াতে কাজের বেতন কত হবে সেটা নির্ভর করবে আপনার কাজের ধরন, দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং কর্মক্ষেত্রের উপর। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে কাজের বেতন কাজভেদে আনুমানিক প্রায় ৩ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।
আরও জানুন: অস্ট্রেলিয়া কাজ অনুযায়ী শ্রমিকের বেতন কত
অস্ট্রেলিয়া ক্লিনার ভিসা
অস্ট্রেলিয়ার ক্লিনার ভিসা পাওয়া তুলনামূলক অনেক সহজ। এই ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গেলে খরচ তুলনামূলক অনেক কম হয়। আউটডোর এবং ইনডোরে ক্লিনারের কাজ করা হয়। যেমন: অফিস, আদালত, কোম্পানি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি। অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য এই কাজটি ভালো হবে। কারণ এখানে কোন ধরনের যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। বেতনও তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।
উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়া প্রতিটি মানুষের কাজকে সম্মান করে থাকে। তাই এই কাজ করলে আপনাকে সেখানে অসম্মানিত হতে হবে না। কারণ এ দেশের সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং উদার মন মানসিকতার। অস্ট্রেলিয়া ক্লিনার ভিসার বেতন আনুমানিক প্রায় ২ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা হয়ে থাকে। আপনি মোট ৮ থেকে ১২ লক্ষ টাকা খরচ করলে অস্ট্রেলিয়া ক্লিনার ভিসা পেয়ে যাবেন।